Header Ads Widget

Responsive Advertisement

রহস্যময় সিনেমা হল

 

রহস্যময় সিনেমা হল
রহস্যময় সিনেমা হল

শহরের সবচেয়ে পুরনো এলাকাপুরনো টাউন’-এর এক কোণায় ছিল এক পুরনো সিনেমা হল—‘সিনেমা প্যালেস এক সময়ে এটি ছিল জমজমাট বিনোদনের কেন্দ্র, কিন্তু কালের বিবর্তনে হারিয়ে গিয়েছে তার জৌলুস। প্রায় দশ বছর ধরে এটি বন্ধ ছিল। কিন্তু সম্প্রতি একটি খবর ছড়িয়ে পড়েছেহলটি আবার খুলছে!

রাহাত, এক উঠতি সাংবাদিক, এই খবর শুনে কৌতূহলী হয়ে উঠল। এতদিন বন্ধ থাকা একটি হল হঠাৎ চালু হচ্ছে কেন? আরও আশ্চর্যের ব্যাপার, কোনো বড় প্রচার নেই, শুধু শহরের বিভিন্ন গলিতে কিছু ছেঁড়া পোস্টার ঝুলছে। পোস্টারে লেখা

এক রাত, এক ছবি, এক রহস্যতুমি কি প্রস্তুত?”

রাহাতের সাংবাদিক মন কৌতূহলী হয়ে উঠল। সে ঠিক করল, এই বিশেষ প্রদর্শনী দেখতে যাবে।

রাতের রহস্য

রাত আটটা। রাহাত যখন সিনেমা হলের সামনে পৌঁছালো, তখন জায়গাটা বেশ অস্বাভাবিক মনে হল। আশেপাশে তেমন কোনো লোকজন নেই। কিন্তু সিনেমা হলের বিশাল দরজাটি খোলা, আর ভিতর থেকে মৃদু আলো বেরিয়ে আসছে। ভিতরে ঢুকে দেখে, এক বৃদ্ধ লোক টিকিট কাউন্টারে বসে আছে।

  • "একটা টিকিট দিন," বলল রাহাত।
  • বৃদ্ধ লোকটি তাকিয়ে রহস্যময় হাসি দিলেন। "একবার ঢুকলে, ফিরে আসা কঠিন হতে পারে। প্রস্তুত?"

রাহাত একটু অস্বস্তি বোধ করল, কিন্তু সে নির্ভয়ে টিকিট নিল এবং ভিতরে ঢুকে পড়ল।

হলের ভিতর

সিনেমা হলের ভেতরটা অদ্ভুত। সাধারণ হলে যতগুলো আসন থাকে, এখানে তার অর্ধেকও নেই। পুরো হলজুড়ে একটা অদ্ভুত গন্ধ ভাসছে, যেন বহু বছর ধরে কেউ আসেনি। আশেপাশে চোখ বুলিয়ে দেখে, মাত্র কয়েকজন দর্শক বসে আছে।

সিনেমা শুরু হলো। কিন্তু অবাক করা ব্যাপার, পর্দায় কোনো সাধারণ সিনেমা চলছে না। পর্দায় দেখানো হচ্ছে ঠিক এই মুহূর্তে হলের ভেতরে বসে থাকা দর্শকদের!

রাহাত হতবাক। সে তাকিয়ে দেখে, ঠিক তার পাশের আসনে বসে থাকা এক ভদ্রলোক স্ক্রিনে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াচ্ছে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে বাস্তবেও সেই লোকটি উঠে দাঁড়ালো, এবং আতঙ্কিত মুখে বলল, "না, আমি আর পারছি না! আমি চলে যাচ্ছি!"

সে দ্রুত বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলো, কিন্তু দরজার কাছে পৌঁছে থেমে গেল। তারপর এক অদৃশ্য শক্তি যেন তাকে টেনে নিল অন্ধকারে! সে চিৎকার করলো, কিন্তু মুহূর্তের মধ্যেই শব্দ বন্ধ হয়ে গেল।

হলজুড়ে নিস্তব্ধতা নেমে এলো। স্ক্রিনে আবার দৃশ্য পরিবর্তন হলো। এবার রাহাত নিজেকে দেখতে পেল।

বাস্তব আর পর্দার খেলা

রাহাত আতঙ্কিত হয়ে পড়ল। স্ক্রিনে সে দেখছে, কিছুক্ষণ পর সে নিজেও উঠে দাঁড়াবে এবং দরজার দিকে যাবে। সে বুঝতে পারছে না, এটা কোনো পূর্ব-রেকর্ডকৃত ভিডিও নাকি তার ভবিষ্যৎ! কিন্তু এই ভাবনার মাঝেই সে বুঝতে পারল, তার শরীর যেন নিজে থেকেই উঠে দাঁড়াচ্ছে!

না, এটা হতে পারে না! সে তার শরীরের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে চেষ্টা করল, কিন্তু কোনো লাভ হলো না। সে ধীরে ধীরে দরজার দিকে এগোতে থাকল।

ঠিক তখনই, কেউ একজন ফিসফিস করে বলল, "বসো! নিজেকে বিশ্বাস করো! নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ নাও!"

রাহাত দ্রুত চেয়ারে বসে পড়ল। পর্দায় তার প্রতিচ্ছবিও একইভাবে বসে পড়ল। তখনই এক বিকট চিৎকার শোনা গেল, যেন কেউ রাহাতের শরীরকে টেনে নিতে চাইছে কিন্তু ব্যর্থ হচ্ছে।

আসল রহস্য

রাহাত দ্রুত চারপাশে তাকিয়ে দেখে, ফিসফিস করে বলা লোকটি একজন যুবতী মেয়ে। তার নাম মেঘলা। সে বলল, "এটা কোনো সাধারণ সিনেমা নয়। এখানে মানুষ আটকা পড়ে যায়। যদি স্ক্রিনে যা দেখানো হয়, তা বাস্তবে ঘটে, তবে তারা এখান থেকে আর বের হতে পারে না!"

  • "তুমি কীভাবে জানো?" প্রশ্ন করল রাহাত।
  • "আমি আটকে পড়েছিলাম তিন বছর আগে। কিন্তু আমি নিয়ম ভেঙে দিয়েছি। এখন আমি চেষ্টা করছি বাকিদের সাহায্য করতে।"

রাহাত বুঝতে পারল, এখানে শুধু সিনেমা চলছে না, বরং মানুষের জীবন নিয়ে এক ধরণের খেলা চলছে।

পালানোর চেষ্টা

রাহাত মেঘলা দ্রুত সিদ্ধান্ত নিল, এখানে আর থাকা যাবে না। তারা হলের পেছনের দিকে ছুটতে লাগল, কিন্তু এক অদ্ভুত শক্তি তাদের পথ আটকে দিল। ঠিক তখনই স্ক্রিনে নতুন একটি দৃশ্য দেখা গেলরাহাত আর মেঘলা দরজা দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে!

তারা বুঝতে পারল, যদি তারা দৃশ্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলে, তাহলে পালানো সম্ভব! রাহাত মেঘলার হাত ধরে দরজার দিকে দৌড় দিল। অদৃশ্য শক্তি তাদের আটকানোর চেষ্টা করলেও, তারা দৃশ্য অনুযায়ী চলতে থাকল।

শেষ মুহূর্তে, দরজার ঠিক বাইরে এসে তারা দেখল বৃদ্ধ টিকিট বিক্রেতা দাঁড়িয়ে হাসছে। সে বলল, "সবাই কিন্তু এভাবে বের হতে পারে না। তোমরা ভাগ্যবান!"

পরিণতি

রাহাত আর মেঘলা যখন বাইরে বের হলো, তখন ঘড়ির কাঁটা ঠিক রাত বারোটা ছুঁইছুঁই। তারা পিছনে ফিরে দেখে, সিনেমা হলটি অন্ধকার হয়ে গেছে। কিছুক্ষণ পর, পুরো বিল্ডিংটিই হাওয়ায় মিলিয়ে গেল!

পরের দিন সংবাদপত্রে কোনো খবর নেই। কোনো সিনেমা হলের অস্তিত্বের প্রমাণও নেই। কিন্তু রাহাত জানে, সে যা দেখেছে, তা বাস্তব। আর সে জানে, এই রহস্যময় সিনেমা হল হয়তো কোনো একদিন আবার কোথাও ফিরে আসবে